Header Ads

লটকনের উপকারিতা ও অপকারিতা

 

লটকনের উপকারিতা

লটকন পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর সুস্বাদু ফল

লটকন (বৈজ্ঞানিক নাম: *Baccaurea ramiflora*) একটি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল যা দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। লটকন কেবল সুস্বাদুই নয়, এতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানও রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে লটকনের চাষ, উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকগুলিও জানা প্রয়োজন।

লটকনের উপকারিতা

১. পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা হাড় মজবুত করে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: লটকনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহ থেকে মুক্ত মৌল দূর করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩. হজমে সহায়ক: লটকন হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের সমস্যাগুলোর জন্য উপকারী। এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪. ওজন কমাতে সহায়ক: লটকন কম ক্যালরিযুক্ত, ফলে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এটি খেলে পেট ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা কমায়।

লটকনের ক্ষতিকর দিক

১. অতিরিক্ত খাওয়া: লটকন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে পেটের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন ডায়রিয়া বা অ্যাসিডিটির সমস্যা।
২. অ্যালার্জি: কিছু মানুষের মধ্যে লটকন খাওয়ার পর অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে, যেমন ত্বকে চুলকানি বা র‍্যাশ। তাই অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৩. রক্তচাপ: অতিরিক্ত লটকন খাওয়া রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপের ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

লটকনের চাষ পদ্ধতি

১. আবহাওয়া ও মাটি: লটকনের চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। এটি বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালোভাবে জন্মায়, তবে মাটি উর্বর হওয়া উচিত। যেখানে পর্যাপ্ত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে এমন স্থানে লটকনের ফলন ভালো হয়।
২. চারা রোপণ: লটকনের চারা সাধারণত বর্ষাকালে রোপণ করা হয়। চারা রোপণের সময় গাছের মাঝখানে ৫-৭ মিটার দূরত্ব রাখা হয়। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গাছ ৫-৭ বছরের মধ্যে ফলন দিতে শুরু করে।
৩. পরিচর্যা: লটকনের গাছকে নিয়মিত সেচ দিতে হয়, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। গাছের নিচে জমে থাকা পানি সরিয়ে দিতে হবে, যাতে গাছের শিকড় পচে না যায়। পাশাপাশি, গাছকে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
৪. ফলন সংগ্রহ: সাধারণত গ্রীষ্মকালে (জুন-আগস্ট) লটকনের ফল পাকা শুরু হয়। ফলে লটকন গাছের কান্ডে গুচ্ছ আকারে ধরে। ফল পাকা অবস্থায় হলুদ রঙ ধারণ করে এবং তখন সংগ্রহ করা হয়।

লটকনের পাওয়া যায় যেখানে

লটকন মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিশেষ করে নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলে লটকনের চাষ ব্যাপকভাবে হয়। এছাড়া ভারতে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, এবং ত্রিপুরাতে লটকন পাওয়া যায়।

ভালো জাতের লটকন

লটকনের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে, তবে বাংলাদেশের কিছু সুপরিচিত জাত হল:

১. নরসিংদীর লটকন: এই জাতটি স্বাদের জন্য বিখ্যাত এবং বাজারে এর চাহিদা বেশি। নরসিংদীর লটকন আকারে বড় এবং সুস্বাদু।
২. গাজীপুরের লটকন: এই জাতটি মাঝারি আকারের এবং খোসা তুলনামূলক পাতলা।
৩. ময়মনসিংহের লটকন: মিষ্টি স্বাদের জন্য এটি জনপ্রিয়, তবে আকারে কিছুটা ছোট।

উপসংহার

লটকন একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও, এর অতিরিক্ত সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে লটকনের ভালো ফলন পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফল সহজেই পাওয়া যায়, বিশেষ করে নরসিংদী অঞ্চলের লটকন সবচেয়ে জনপ্রিয়।

আরো দেখুন.


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.